প্রিন্ট এর তারিখঃ Apr 19, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Apr 18, 2025 ইং
কুমিল্লা মেডিকেলে কমিশন বাণিজ্যে অসহায় রোগীরা

বাংলার প্রতিচ্ছবি : কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের এমআরআই মেশিন আট মাস ধরে বন্ধ। যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকলেও মেশিনটি অকেজো করে রাখার কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। সেবা প্রত্যাশীদের দাবি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (প্রাইভেট ক্লিনিক) থেকে কমিশন পেতে পরিকল্পিতভাবে মেশিনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
অভিযোগ, কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎকদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, কুমেক হাসপাতালে তিন হাজার টাকায় এমআরআই করা যায়। অথচ ক্লিনিকে এজন্য সাত হাজার টাকা খরচ করতে হয়। শুধু এমআরআই মেশিনই নয়, এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান মেশিনও পরিকল্পিতভাবে অকেজো করে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ৬০ শতাংশ কমিশন হাতিয়ে নিতেই হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা মেশিনটি বন্ধ রেখেছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, আট মাস ধরে কুমেক হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা হচ্ছে না। মেশিন সচল থাকলেও সেবা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন রোগীর এমআরআই করা হতো। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, পরিচালক ও চিকিৎসক সিন্ডিকেটের যোগসাজশে এখন মেশিন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ৩-৪ মাস ধরে ফিল্ম না থাকার অজুহাতে এক্স-রে, টেবিল সমস্যা দেখিয়ে সিটিস্ক্যান বন্ধ রাখা হয়েছে।
রোগী ও স্বজনদের দাবি, এ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেবা বন্ধ রেখে হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা লাখ লাখ টাকা কমিশন নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, কুমেক হাসপাতালের ফটকে ব্যাঙের ছাতার মতো অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের দরজার সামনে ক্লিনিকের দালালরা সার্বক্ষণিক দাঁড়িয়ে থাকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা লেখা হলেই রোগীদের তারা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
মুরাদনগর উপজেলা থেকে অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসা করাতে কুমেক হাসপাতালে আসেন নাজমা বেগম। চিকিৎসক রোগীকে সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দেন। নাজমা বেগম বলেন, ক্লিনিকে গিয়ে তাকে ৭ হাজার টাকায় পরীক্ষা করাতে হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষাটি তিন হাজার টাকায় করাতে পারতাম। তিনি বলেন, হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকরা প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে কমিশন পান। এ কারণে তারা হাসপাতালের মেশিন বন্ধ রেখেছেন।
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার চানপুর এলাকার বাসিন্দা রিনা আক্তার বলেন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য আমরা সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু চিকিৎসক এক্স-রে লিখে বলে দেন বাইরে থেকে করে আনার জন্য। কমিশনের জন্যই মেশিনগুলো অকেজো করে রাখা হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন কসাইখানায় পরিণত হয়েছে।
বরুড়া উপজেলার আড্ডা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য পরিচালক একমাত্র দায়ী। তিনি এসব সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন।
কুমেক হাসপাতালের এমআরআই টেকনোলজিস্ট আল-মামুন বলেন, এমআরআই মেশিন ঠিক আছে। তবে ফলস ছাদ ভেঙে আছে। তাই কর্তৃপক্ষ মেশিনটি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সিটিস্ক্যান টেকনোলজিস্ট সুজন চন্দ্র বলেন, মেশিনে কিছুটা ত্রুটি থাকায় মাঝেমধ্যে বন্ধ রাখা হয়। বাকিটা পরিচালক মহোদয় বলতে পারবেন।
এক্স-রে টেকনোলজিস্ট শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, অনেকদিন ধরে ফিল্ম নেই। তাই এক্স-রে করাতে পারছি না। বাকি উত্তর কর্তব্যরতরা দিতে পারবেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, এগুলো ওপরের সমস্যা। আর বেশি কিছু বলতে পারব না। এখানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী আসে। এগুলো নিয়ে লেখেন না কেন? আপনারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে লেখেন না কেন?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, কুমেক হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে আমরা অনেক অভিযোগ শুনেছি। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব। নৈরাজ্য ও অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রকাশক : ফারুক শিকদার
সম্পাদক : হিল্লোল বাউলিয়া
অফিস : যোগাযোগ: ৩০৫, জহর টাওয়ার, এলিফ্যান্ট রোড,নিউমার্কেট, ঢাকা-১২০৫
ইমেইল : banglarproticchobi@gmail.com
মোবাইল : ০১৬৩৩৬০৭২৫৫, ০১৮৪৮- ১২৭৩৯২
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ বাংলার প্রতিচ্ছবি